Skip to main content

আমি কেন জামায়াত-শিবির পছন্দ করি না

 




আমাকে যারা চেনেন, ভালো করেই জানেন, আমি জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি পছন্দ করি না। এ নিয়ে আমি কখনও রাখঢাক-গোপন করিনি। আমার এই বোধোদয় ঘটেছে খুবই অল্প বয়সে, যখন দিন-দুনিয়া সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের শুরু।


ক্লাস নাইনে পড়ি তখন। প্রচুর গান শুনি, আর শুনতে শুনতেই ইচ্ছে জাগল গান-বাজনা করব। সেই সময় প্রায় প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় কমপক্ষে একটি করে ব্যান্ড ছিল, আমাদের পাড়ায় ছিল সুপারহিট নোভা ব্যান্ড।


মহল্লার এক বাল্যবন্ধুর সঙ্গে দিনমান আড্ডা দিই পাড়ার রকে বসে, আমরা সেটাকে ‘ম্যার’ বলতাম। আমাদের সামনে দিয়ে জগন্নাথ কলেজের এক ছাত্র সাইকেল চালিয়ে প্রতিদিন কাজী বাড়ির মসজিদের পাশে মেসে যেতেন। একদিন সেই ছাত্রটি আমাদের সঙ্গে ভাব করার চেষ্টা করলেন, কী করি, কোথায় পড়ি, এসব। এরপর থেকে প্রায় প্রতিদিনই সেই লোক সাইকেল থামিয়ে আমাদের সঙ্গে কয়েক মিনিট কথা বলতেন। খুবই ভদ্র আর সজ্জন ব্যক্তি, এবং ক্লিন শেভড।আলাপ থেকে সেই লোক জানতে পারলেন আমি বই পড়ি। একদিন তার মেসে নিয়ে গিয়ে নসীম হিজাজীর শেষ প্রান্তর শিরোনামের বই ধরিয়ে দিলেন। ততদিনে আমি সুনীল-মানিক-শরৎ-হুমায়ুন-ছফা-ডয়েল আর ক্রিস্টিসহ অনেকের নাম জানলেও এই লেখকের নাম জানতাম না। বই খুলে জানতে পারলাম লেখক পাকিস্তানি। তখন হাতের কাছে ঠোঙা পেলেও পড়ি। যতদূর মনে আছে, ক্রুসেডের কাহিনি ছিল বইটাতে। মাত্র দুদিনে বইটা পড়ে জমা দিয়ে দিলে সেই লোক মুগ্ধ হয়ে হিজাজীর আরেকটা বই ধরিয়ে দিলেন।তখন রোজা চলছে। একদিন ইফতারের দাওয়াত দিলেন সেই লোক, আমি আর আমার বন্ধু গেলাম তার মেসে, সেখানে আরো দশ-বারোজন মেহমানও ছিলেন। ইফতার শেষে আবারও শুরু হলো ‘আলাপ’। আলাপ মানে নির্দিষ্ট একটি রাজনৈতিক দলের গুণগান। সংক্ষেপে বলতে গেলে, ক্রুসেডের বীর সালাদিনের যোগ্য উত্তরসূরী এই দেশে আছে! এবার আরেকটু খুল্লাম-খুল্লা। আমরা দুই ছোট্ট প্রাণ শুনে গেলাম তাদের কথা—গণতন্ত্র হলো কাফেরদের তন্ত্র! মুক্তিযুদ্ধ ছিল মারাত্মক ভুল! ভারত ষড়যন্ত্র করে পাকিস্তান ভেঙে মুসলমানদের দুর্বল করে ফেলেছে! পাকিস্তান মিলিটারি যা করেছে ইসলাম রক্ষার জন্যই করেছে! ১৪ ডিসেম্বরের বুদ্ধিজীবী হত্যা আসলে ‘র’ এবং আওয়ামী লীগ করেছে! শহীদ মিনারে ফুল দেওয়াটা শিরক! রবীন্দ্রনাথ মুসলমানবিদ্বেষী ছিলেন। কোনো মুসলমানের উচিত না তার গান শোনা।

‘অন্য গান শোনা যাবে?’

‘না। ইসলাম গান-বাজনা হারাম করেছেআমি আমার বন্ধুর দিকে তাকালাম। মাত্র কদিন আগে টাকা জমিয়ে গিটার কিনেছি, রোজার পর বাড়ির পাশে নোভা ব্যান্ডের ফজল ভাইয়ের কাছে যাব শিখতে। সেই শিবির নেতা আরো অনেক কথা বললেন, সবটাই মারাত্মক বিষাক্ত। ততদিনে আমি বই পড়ে একটু পেকে গেছি, ইত্তেফাক পত্রিকা পড়ি সকাল সকাল। ধর্মের মোড়কে বলা বিষাক্ত কথাবার্তাগুলো বুঝতে কষ্ট হয়নি। আর পত্রিকা পড়ে এ-ও জানতাম, শিবির তখন রগকাটা নিয়ে ভীষণ সমালোচিত। এবার শুরু হলো তর্ক। তর্কে আরো বেশি বিষাক্ত কথাবার্তা উঠে এলো। সেগুলো অন্য একদিন বলব।।’সেই লোক প্রথমে যুক্তি দিয়ে যুক্তি খণ্ডাতে লাগলেন, কোনঠাসা হওয়ার পর শুরু হলো কেবল ধর্ম আর ধর্মের দোহাই! এসব বিষাক্ত কথাবার্তা জামায়াত-শিবির কখনও স্বীকার করবে না, জানি। তারা যখন নতুন কাউকে দলে টানে তখন এগুলোই বলে; এভাবেই ব্যাপ্টাইজ করে কর্মীদেরকে। গলদটা সেখানেই। ফলে যত ভালো আর বুদ্ধিমান ছেলেই হোক না কেন, শিবিরের ছেলেপেলেদের বেসিকে মারাত্মক সমস্যা রয়েছে। নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে সেটার প্রকাশও ঘটে হরহামেশা। ভবিষ্যতেও ঘটবে। আর যদি কখনও ক্ষমতায় চলে যায়, তখন দেখবেন এই ব্যাপ্টাইজ করার ফলাফল কী হতে পারে!


সত্যি বলতে, আমি মনে করি শিবিরের ছেলেপেলেরা আসলে ‘ভিকটিম’! তাদের মধ্যে খুব কম সদস্যই পারে এই গোলকধাঁধা থেকে বের হয়ে আসতে, কেননা স্বাধীনভাবে চিন্তা করার ক্ষমতাটাকেই শেষ করে দেওয়া হয় প্রথমে। আদতে তারা বিষাক্ত মতাদর্শে ব্যাপ্টাইজ হওয়া জম্বি।মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন: কথাসাহিত্যিক ও প্রকাশক


সুত্র: দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস


আপনার মতামত লিখুনঃ

Countdown Timer

Comments

Popular posts from this blog

এইমাএ পাওয়া: আবারও সারাদেশের জন্য বড় দুঃসংবাদ!

  বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় ও উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় রয়েছে মৌসুমী বায়ু। এই বায়ুর প্রভাবে অস্থায়ী ঝড় বয়ে যেতে পারে উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা ও সমুদ্র বন্দরগুলোর ওপর দিয়ে। এ অবস্থায় দেশের চার সমুদ্রবন্দরে তিন নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সেইসঙ্গে দেশের বেশ কিছু অঞ্চলে টানা ১০ দিন ভারী বৃষ্টির আভাসও দিয়েছে সংস্থাটি। শুক্রবার (২২ আগস্ট) বাংলাদেশ আবাহাওয়া অধিদপ্তরের পৃথক দুই বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা গেছে এসব তথ্য। এদিন দেশের চার সমুদ্রবন্দর ও অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোর জন্য দেওয়া আবহাওয়া সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা ও সমুদ্র বন্দরগুলোর ওপর দিয়ে বয়ে যেতে পারে অস্থায়ী ঝড়। এ অবস্থায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হলো। একইসঙ্গে উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করার নির্দেশ দেওয়া হলো।ছাড়া, অন্য আরেকটি বিজ্ঞপ্তিতে দেওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, শুক্রবার (২২ আ...

বিয়ের দুইদিন বাকি- মালয়েশিয়া প্রবাসী নূর মোহাম্মদের বাড়িতে আনন্দ, উৎসব আর সাজ সাজ রব। দেশে পা রেখেই কল দেন প্রাণপ্রিয় মাকে; কথা হয় দীর্ঘক্ষণ। একদিকে অনেকদিন পর পরিবারের লোকজনের মুখ দেখার আনন্দ; অন্যদিকে মনে বাজছিল বিয়ের সানাই। কিন্তু, মুহূর্তের মধ্যেই সব আনন্দ ভাসিয়ে নিয়ে গেল বানের পানি। নূর মোহাম্মদ মালয়েশিয়া থেকে এসেছিলেন বিয়ে করতে। কিন্তু এর মধ্যেই ঘটে যায় এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়। এই বিপর্যয়ে নিজের মাসহ পরিবারের ২৪ সদস্যকে হারান তিনি। বিয়ে জন্য এসে পরিবারের ২৪ জনের জানাজা পড়তে হলো তাকে।

  হৃদয় বিদারক এ ঘটনাটি ঘটেছে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের বুনের বিভাগের কাদির নগর গ্রামে। বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে নূর মোহাম্মদ বলেন, আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না, মা কতটা খুশি ছিল।  কাদির নগর গ্রামে নিজের পরিবারের ৩৬ রুমের বাড়িটির ধ্বংসস্তূপের পাশে বসে কাঁদতে কাঁদতে নূর মোহাম্মদ বলেন, সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। বাড়ির কোনো কিছু অবশিষ্ট নেই। শুধু বড় বড় পাথর আর ধ্বংসস্তূপ পড়ে আছে। বন্যার পানিতে সব ভেসে এসেছে। বন্যার সঙ্গে আসা পাথরগুলো সামনে যা ছিল তার সব ধসিয়ে দিয়েছে। বাদ যায়নি বাড়িঘর, দোকান, মার্কেট কিছুই। আমার বাড়ি, মা, বোন, ভাই, আমার চাচা, আমার দাদা এবং আর সব শিশুদের নিয়ে গেছে এই বন্যা। নূর মোহাম্মদ গত ১৫ আগস্ট মালয়েশিয়া থেকে পাকিস্তানে ফেরেন। ওইদিনই ইসলামাবাদ বিমানবন্দর থেকে বাড়িতে আসার কথা ছিল তার। তখন বাড়িতে পুরোদমে তার বিয়ের প্রস্তুতি চলছিল। কিন্তু বিয়ের বদলে পরিবারের ২৪ জনের জানাজায় উপস্থিত হতে হয়েছে তাকে। মা, বোন, ভাই, চাচা, দাদা তার বাড়িতেই থাকতো। আর বিয়ে উপলক্ষে অন্য আত্মীয়রাও উপস্থিত হয়েছিলেন। তারাও ভয়াবহ এ বন্যায় প্রাণ হারিয়েছেন। তবে, তাকে বিমানবন্দর থেকে আনতে য...

মাহফুজ বিএনপি থেকে নির্বাচন করবেন কিনা, যা বললেন বাবা আজিজুর

  অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার পদ থেকে মো. নাহিদ ইসলামের পদত্যাগের পর তার স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে মো. মাহফুজ আলমকে। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট শপথ নেয় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। এরপর ২৮ আগস্ট মাহফুজকে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ১০ নভেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন মাহফুজ। তবে সে সময় তাকে নির্দিষ্ট কোনো মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।ইছাপুর ইউনিয়নের শ্রীরামপুর উচ্চবিদ্যালয়ে ভোটগ্রহণ হয়। এতে ৪৫৩ জন ভোটার ভোট দেন। নির্বাচনে মোরগ প্রতীক নিয়ে ২৬৬ ভোট পেয়ে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন আজিজুর রহমান। নির্বাচিত হওয়ার পর শুক্রবার যুগান্তর মাল্টিমিডিয়াকে সাক্ষাকার দেন মাহফুজের বাবা। সাক্ষাকার নিয়েছেন মাল্টিমিডিয়ার ডেস্ক রিপোর্টার মো. আশরাফুল। আজিজুর রহমান মাল্টিমিডিয়ার সঙ্গে অনেক বিষয়ে কথা বলেছেইছাপুর ইউনিয়নের শ্রীরামপুর উচ্চবিদ্যালয়ে ভোটগ্রহণ হয়। এতে ৪৫৩ জন ভোটার ভোট দেন। নির্বাচনে মোর...